সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যিহোবা কে?

যিহোবা কে?

বাইবেলের উত্তর

 যিহোবা হলেন বাইবেলে উল্লেখিত সত্য ঈশ্বর, সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) ভাববাদী অব্রাহাম ও মোশি তাঁর উপাসনা করেছিলেন, এমনকী যিশুও তাঁর উপাসনা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৪:২৭; যাত্রাপুস্তক ১৫:১, ২; যোহন ২০:১৭) যিহোবাই হলেন “সমস্ত পৃথিবীর” ঈশ্বর, কোনো একটা নির্দিষ্ট জাতির লোকদের নয়।—গীতসংহিতা ৪৭:২.

 যিহোবা নামটা বাইবেলে উল্লেখিত ঈশ্বরের অদ্বিতীয় নাম। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫; গীতসংহিতা ৮৩:১৮) এই নামটা একটা ইব্রীয় ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ হল “অস্তিত্বে আনা।” আর অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, এই নামের অর্থ হল “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” যিহোবা যেহেতু সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সবসময় তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করেন, তাই একজন সৃষ্টিকর্তা ও উদ্দেশ্য সাধনকারী হিসেবে তাঁর ভূমিকার সঙ্গে এই অর্থটা উপযুক্তভাবে মিলে যায়। (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) এ ছাড়া, বাইবেল আমাদের যিহোবার ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষভাবে তাঁর প্রধান গুণ প্রেম সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে।—যাত্রাপুস্তক ৩৪:৫-৭; লূক ৬:৩৫; ১ যোহন ৪:৮.

 ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নামটা চারটে বর্ণ ব্যবহার করে লেখা হয়ে থাকে, יהוה (YHWH বা যহবহ), যা টেট্রাগ্র্যামাটোন হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নাম আসলে কীভাবে উচ্চারণ করা হতো, তা আমরা আজও জানি না। তবে বাংলা ভাষায় ঈশ্বরের নাম এভাবে উচ্চারণ করা হয়, “যিহোবা।” বেশ কিছু বাংলা বাইবেলে “যিহোবা” নামটা পাওয়া যায়, যেমন বাইবেল সোসাইটি অভ্‌ ইন্ডিয়া-রপবিত্র বাইবেল (O.V.)-তে। ইংরেজি ভাষায় ঈশ্বরের নামের প্রচলিত উচ্চারণ হল “জেহোভা।” ইংরেজি ভাষায় ঈশ্বরের নাম প্রথম বার ১৫৩০ সালে উইলিয়াম টিনডেলের দ্বারা অনুবাদিত বাইবেলে পাওয়া যায়। a

প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নামের সঠিক উচ্চারণ কী ছিল, তা কেন আমরা আজও জানি না?

 প্রাচীন ইব্রীয় ভাষা স্বরবর্ণ ছাড়াই লেখা হতো অর্থাৎ লেখার সময় শুধু ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহার করা হতো। তবে, ইব্রীয়ভাষী লোকেরা জানত যে, পড়ার সময় কোন শব্দে কোন স্বরবর্ণ ব্যবহার করতে হবে। ইব্রীয় শাস্ত্র অর্থাৎ “পুরাতন নিয়ম” লেখা শেষ হওয়ার কিছুসময় পর যিহুদিদের মধ্যে এই অন্ধবিশ্বাস প্রচলিত হয়ে ওঠে যে, ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম মুখে আনা ভুল। শাস্ত্র জোরে জোরে পড়ার সময় যখন কোনো পদে ঈশ্বরের নাম লেখা থাকত, তখন তারা সেখানে তাঁর নামের জায়গায় “প্রভু” বা “ঈশ্বর” বলে পড়ত। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অন্ধবিশ্বাস এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, একসময় লোকেরা ঈশ্বরের নামের সঠিক উচ্চারণই ভুলে যায়। b

 কেউ কেউ মনে করে, ঈশ্বরের নাম “ইয়াওয়ে” হিসেবে উচ্চারণ করা হতো। আবার অন্যেরা মনে করে যে, সেটা অন্যভাবে উচ্চারণ করা হতো। ডেড সি-এর কাছাকাছি এলাকায় লেবীয় পুস্তকের একটা ছোটো অংশ পাওয়া যায়, যেটা গ্রিক ভাষায় লেখা ছিল। সেটাতে ঈশ্বরের নাম ইয়াও (Iao) হিসেবে লেখা রয়েছে। আগেকার দিনের কিছু গ্রিক লেখকদের কথা অনুযায়ী ঈশ্বরের নামের উচ্চারণ ইয়াই (Iae), ইয়াবি (I·a·beʹ) অথবা ইয়েওউয়ি (I·a·ou·eʹ) হতে পারে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নাম কীভাবে উচ্চারণ করা হতো। c

বাইবেলে ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে কিছু ভুল ধারণা

 ভুল ধারণা: বাইবেলের অনুবাদ করার সময় কিছু কিছু অনুবাদক “যিহোবা” নামটা যোগ করেছে।

 সত্য বিষয়: ইব্রীয় ভাষার বাইবেলে ঈশ্বরের নাম (চারটে বর্ণ বা টেট্রাগ্র্যামাটোন) প্রায় ৭,০০০ বার ব্যবহার করা হয়েছে। d কিন্তু, অনেক অনুবাদক কোনো জোরালো কারণ ছাড়াই বাইবেল থেকে ঈশ্বরের নাম তুলে দিয়েছে আর সেটার জায়গায় বিভিন্ন উপাধি ব্যবহার করেছে, যেমন “ঈশ্বর” বা “সদাপ্রভু।”

 ভুল ধারণা: সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো ব্যক্তিগত নামের প্রয়োজন নেই।

 সত্য বিষয়: ঈশ্বর নিজে বাইবেল লেখকদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেন বাইবেলে তারা তাঁর নাম হাজার হাজার বার ব্যবহার করে। আর যারা তাঁর উপাসনা করে, তিনি তাদের তাঁর নাম ব্যবহার করার জন্য নির্দেশনা দেন। (যিশাইয় ৪২:৮; যোয়েল ২:৩২; মালাখি ৩:১৬; রোমীয় ১০:১৩) এ ছাড়া, যখন কিছু মিথ্যা ভাববাদী চেষ্টা করেছিল, লোকেরা যেন তাঁর নাম ভুলে যায়, তখন ঈশ্বর তাদের ধিক্কার দিয়েছিলেন।—যিরমিয় ২৩:২৭.

 ভুল ধারণা: যিহুদিদের রীতি অনুযায়ী বাইবেল থেকে ঈশ্বরের নাম মুছে ফেলা উচিত।

 সত্য বিষয়: এটা সত্য যে, কিছু যিহুদি অধ্যাপক ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু, তারা কখনো ঈশ্বরের নাম বাইবেল থেকে মুছে ফেলেননি। যাই হোক, ঈশ্বর চান না যে, আমরা মানুষের তৈরি কোনো রীতিনীতি অনুসরণ করে তাঁর আজ্ঞা অমান্য করি।—মথি ১৫:১-৩.

 ভুল ধারণা: যেহেতু আমরা জানি না, ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নামের সঠিক উচ্চারণ কী, তাই বাইবেলে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।

 সত্য বিষয়: যারা এইরকম যুক্তি করে, তারা মনে করে যে, ঈশ্বর চান লোকেরা যে-ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, তারা যেন তাঁর নাম একইভাবে উচ্চারণ করে। কিন্তু বাইবেল থেকেই আমরা জানতে পারি যে, অতীতে ঈশ্বরের উপাসকেরা কোনো ব্যক্তির নাম ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্নভাবে উচ্চারণ করত।

 উদাহরণ স্বরূপ, ইজরায়েলের বিচারক যিহোশূয়ের নামটা নিয়ে চিন্তা করুন। প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয়ভাষী খ্রিস্টানরা তার নাম সম্ভবত ইয়েহোশূয়া বলে উচ্চারণ করত। আবার অন্যদিকে গ্রিকভাষী খ্রিস্টানরা তার নাম সম্ভবত ইয়েসোউস বলে উচ্চারণ করত। আর বাইবেলেও যিহোশূয়ের ইব্রীয় নামের গ্রিক অনুবাদ পাওয়া যায়। এটা থেকে বোঝা যায় যে, সেই সময়ের খ্রিস্টানরা বিচক্ষণ ছিল আর একজন ব্যক্তির নাম তাদের ভাষায় যেভাবে প্রচলিত ছিল, তারা তা সেভাবেই উচ্চারণ করত।—প্রেরিত ৭:৪৫; ইব্রীয় ৪:৮.

 ঈশ্বরের নামের ক্ষেত্রেও আমরা একই বিষয় মনে রাখতে পারি যে, ভাষা অনুযায়ী তাঁর নামের উচ্চারণ আলাদা হতে পারে। আর ঈশ্বরের নামের সঠিক উচ্চারণ জানাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাইবেলের যেখানে যেখানে তাঁর নাম থাকার কথা, সেখানে সেখানেই যেন তা থাকে।

a বাইবেলের প্রথম পাঁচটা বই ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উইলিয়াম টিনডেল “ইহোয়ুআ” নামটা ব্যবহার করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি ভাষা পরিবর্তন হতে থাকে এবং ঈশ্বরের নামের বানানও পরিবর্তন হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ, ১৬১২ সালে হেনরি এইনস্‌ওয়ার্থ গীতসংহিতা বই অনুবাদ করার সময় সমস্ত জায়গায় “ইহোভা” নামটা ব্যবহার করেন। এরপর ১৬৩৯ সালে যখন তিনি সেই বই পরিমার্জিত করেন, তখন সেখানে “জেহোভা” নাম ব্যবহার করেন। একইভাবে, ১৯০১ সালে যে-অনুবাদকরা অ্যামেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ভারশন বাইবেল অনুবাদ করেন, তারা ইব্রীয় পাঠ্যাংশের যেখানে যেখানে ঈশ্বরের নাম ছিল, সেখানে সেখানে “যিহোবা” নাম ব্যবহার করেন।

b নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া দ্বিতীয় সংস্করণ, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৮৮৩-৮৮৪ বলে: “বাবিলের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার কিছু সময় পর ইজরায়েলীয়েরা ঈশ্বরের নাম ইয়াওয়ে হিসেবে উচ্চারণ করা বন্ধ করে দেয় এবং তাঁকে আদোনাই বা ইলোহিম বলে ডাকতে শুরু করে।”

c আরও তথ্য জানার জন্য ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা পুস্তিকার ১ নং বিভাগ দেখুন, যেটার শিরোনাম হল, “ইব্রীয় শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম।

d থিওলজিক্যাল লেক্সিক্যান অব দি ওল্ড টেস্টামেন্ট খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫২৩-৫২৪ দেখুন।