সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে সান্ত্বনা প্রদান করেন

যিহোবা আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে সান্ত্বনা প্রদান করেন

“সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর . . . আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।”—২ করি. ১:৩, ৪.

গান সংখ্যা: ৩৮, 

১, ২. কীভাবে যিহোবা আমাদের ক্লেশের সময় সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং তাঁর বাক্যে আমরা কোন প্রতিজ্ঞা খুঁজে পাই?

একজন অবিবাহিত যুবক ভাই ১ করিন্থীয় ৭:২৮ পদের কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করছিলেন, যেখানে লেখা আছে, যারা বিয়ে করবে, তাদের “দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে।” সেই ভাই একজন বয়স্ক বিবাহিত প্রাচীনের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন: “এই ‘ক্লেশ’ আসলে কী এবং আমি যদি বিয়ে করি, তা হলে কীভাবে এটার সঙ্গে মোকাবিলা করব?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, প্রাচীন ভাই সেই যুবক ভাইকে প্রেরিত পৌলের লেখা অন্য একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে বলেন: যিহোবা হলেন “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।”—২ করি. ১:৩, ৪.

আমরা জানি, আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং আমরা যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকি, তখন তিনি আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করেন। আপনার হয়তো নির্দিষ্ট কিছু সময়ের কথা মনে আছে, যখন যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য ও নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের জন্য সর্বোত্তমটা চান, ঠিক যেমনটা তিনি অতীতে তাঁর দাসদের জন্য চেয়েছিলেন।—পড়ুন, যিরমিয় ২৯:১১, ১২.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করব?

সাধারণত, আমরা যখন বুঝতে পারি যে, কেন আমাদের প্রতি সমস্যা ও ক্লেশ ঘটছে, তখন সেগুলো সহ্য করা আমাদের পক্ষে সহজ হয়। তাই, কোন কোন কারণে আমাদের বিয়ে অথবা পরিবারের মধ্যে ক্লেশ ঘটতে পারে? আর বাইবেলের সময়ের এবং আমাদের সময়ের কোন উদাহরণগুলো আমাদের প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা লাভ করার জন্য সাহায্য করতে পারে? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করি আর দেখি যে, কীভাবে আমরা ক্লেশ সহ্য করতে পারি।

বিয়ের মধ্যে সমস্যা

৪, ৫. একজন স্বামী ও স্ত্রী কোন ক্লেশগুলো ভোগ করতে পারেন?

যিহোবা প্রথম নারীকে সৃষ্টি করার পর, তাকে আদমের কাছে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেই নারী আদমের স্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর যিহোবা বলেছিলেন: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদি. ২:২৪) অবশ্য, বর্তমানে আমরা সকলেই অসিদ্ধ। (রোমীয় ৩:২৩) এই কারণে, একজন পুরুষ ও একজন নারী যখন বিয়ে করেন, তখন তারা আশা করতে পারেন, তাদের বিয়েতে সমস্যা দেখা দেবে। উদাহরণ স্বরূপ, বিয়ের আগে একজন নারীকে খুব সম্ভবত তার বাবা-মায়ের বাধ্য থাকতে হতো। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলে, বিয়ের পর একজন স্বামী তার স্ত্রীর মস্তক হয়ে ওঠেন। (১ করি. ১১:৩) প্রথম প্রথম, স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া কঠিন হতে পারে। আর স্ত্রীর পক্ষে তার বাবা-মায়ের পরিবর্তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া, বিবাহিত জীবনের শুরুর দিকে এক দম্পতির সঙ্গে তাদের শ্বশুর-শাশুড়ির মতের অমিল দেখা দিতে পারে আর এটাও একটা ক্লেশ হতে পারে।

এই বিষয়টাও চিন্তা করুন, একজন স্বামী ও স্ত্রী যখন বুঝতে পারেন যে, তাদের সন্তান হতে চলেছে, তখন তারা কেমন অনুভব করেন। যদিও তারা হয়তো খুবই আনন্দিত হয়ে থাকেন কিন্তু সাধারণত তারা উদ্‌বিগ্নও হয়ে পড়েন। তারা হয়তো ভাবতে পারেন, গর্ভাবস্থার সময় সব কিছু ঠিকঠাক হবে কি না এবং তারা হয়তো সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়েও চিন্তা করতে পারেন। এ ছাড়া তারা জানেন যে, তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে। সন্তান জন্মানোর পর, সেই দম্পতিকে অন্যান্য রদবদল করতে হবে। মাকে হয়তো তার বেশিরভাগ সময় সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে, স্বামী ও স্ত্রী হয়তো আগের মতো একে অপরের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন না। এ ছাড়া, বাবার দায়িত্বও বৃদ্ধি পাবে। তাকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন তার স্ত্রী ও সন্তান, উভয়ই তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করেন।

৬-৮. এক বিবাহিত দম্পতির যদি সন্তান না হয়, তা হলে তারা হয়তো কেমন অনুভব করেন?

কোনো কোনো বিবাহিত দম্পতিকে আরেক ধরনের ক্লেশ ভোগ করতে হয়। তাদের হয়তো সন্তান লাভ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে তারা সফল হতে পারেন না। একজন স্ত্রী যখন গর্ভবতী হতে পারেন না, তখন তিনি হয়তো প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট ভোগ করেন। (হিতো. ১৩:১২) বাইবেলের সময়ে, মহিলাদের জন্য বিয়ে করা এবং সন্তানের জন্ম দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ছিল। এই কারণে যাকোবের স্ত্রী রাহেল যখন দেখেছিলেন যে, তিনি গর্ভবতী হতে পারছেন না কিন্তু অন্যদিকে তার দিদি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, তখন তিনি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। (আদি. ৩০:১, ২) বর্তমানেও, কোনো কোনো দেশে অনেকে এমনটা বিশ্বাস করে, একজন মায়ের বেশ কয়েকটা সন্তান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই দেশগুলোতে যে-সমস্ত মিশনারিরা কাজ করেন, তাদের প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয় যে, কেন তাদের একটাও সন্তান নেই। এমনকী মিশনারিরা নিজেদের সাধ্যমতো বোঝানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও কেউ কেউ বলে থাকে, “চিন্তা করবেন না, আমি এমন একজন ব্যক্তিকে জানি, যিনি আপনাদের সাহায্য করতে পারেন।”

আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ইংল্যান্ডের একজন বোনের খুব ইচ্ছা ছিল, যেন তার একটা সন্তান হয়। কিন্তু, তিনি যখন বুঝতে পারেন যে, এই বিধিব্যবস্থায় তিনি সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না, তখন তিনি একেবারে ভেঙে পড়েন। একসময়, তিনি এবং তার স্বামী একটা সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, এরপরও কিছুসময় পর্যন্ত তিনি কষ্ট পেতে থাকেন। সেই বোন বলেন, “আমি জানতাম, একটা সন্তান দত্তক নেওয়া এবং নিজের সন্তানের জন্ম দেওয়া, এক বিষয় নয়।”

বাইবেল বলে, একজন নারী “সন্তান প্রসব দিয়া পরিত্রাণ পাইবে।” (১ তীম. ২:১৫) কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলেই তিনি অনন্তজীবন লাভ করবেন। তা হলে, এই শাস্ত্রপদের অর্থ কী? একজন মা, তার সন্তান ও পরিবারের যত্ন নেওয়ার কাজে খুবই ব্যস্ত থাকেন। আর এটা তাকে পরচর্চা করা অথবা তার চিন্তার বিষয় নয়, এমন কোনো কিছুতে জড়িত হওয়া এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে। (১ তীম. ৫:১৩) তবে, এরপরও তাকে হয়তো তার বিয়ে ও পরিবারের মধ্যে সমস্যা ভোগ করতে হবে।

আপনি যদি মৃত্যুতে আপনার বিবাহসাথিকে হারিয়ে থাকেন, তা হলে কীভাবে আপনি সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন? (৯, ১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. বিবাহিত ব্যক্তিদের হয়তো অন্য কোন ক্লেশ ভোগ করতে হয়?

কোনো কোনো বিবাহিত ব্যক্তিকে যে-ক্লেশগুলো ভোগ করতে হয়, সেগুলোর মধ্যে একটা হল মৃত্যুতে বিবাহসাথিকে হারানো। যদিও তারা ভেবে থাকে যে, তাদের প্রতি কখনো এমনটা ঘটবে না কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেককে এই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। খ্রিস্টানরা দৃঢ়রূপে পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করে আর এটা তাদের প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) আমাদের পিতা যিহোবা, তাঁর বাক্যে এমন অনেক প্রতিজ্ঞা করেছেন, যেগুলো আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে সান্ত্বনা প্রদান করে। এখন আসুন আমরা লক্ষ করি, কীভাবে যিহোবার কয়েক জন দাস এই সান্ত্বনা লাভ করেছে এবং কীভাবে এই বিষয়টা তাদের সাহায্য করেছে।

ক্লেশ ভোগ করার সময় সান্ত্বনা

১০. কীভাবে হান্না সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১০ বিবেচনা করুন, ইল্‌কানার প্রিয় স্ত্রী হান্নার প্রতি কী ঘটেছিল। তিনি সন্তানধারনে অক্ষম হওয়ায় মা হতে পারছিলেন না। অন্যদিকে, তার স্বামীর আরেক স্ত্রী পনিন্নার অনেক সন্তান ছিল। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১:৪-৭.) পরিস্থিতি আরও খারাপ করার জন্য, পনিন্না “বৎসর বৎসর” এই বিষয়টার কারণে হান্নাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন। হান্না এতে খুবই দুঃখ পেতেন। সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি কী করেছিলেন? তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। হান্না এমনকী যিহোবার উপাসনার স্থলে গিয়েছিলেন এবং এক দীর্ঘ প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে একটা পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন এবং এই বিষয়ে আস্থা রেখেছিলেন যে, যিহোবা তাকে সাহায্য করবেন। প্রার্থনা করার পর, তিনি অনেকটা স্বস্তি লাভ করেছিলেন এবং শাস্ত্র বলে, “তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না।” (১ শমূ. ১:১২, ১৭, ১৮) তিনি জানতেন, যিহোবা হয় তাকে একটা পুত্রসন্তান দেবেন, নতুবা অন্য কোনো উপায়ে তাকে সান্ত্বনা প্রদান করবেন।

১১. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?

১১ যেহেতু আমরা অসিদ্ধ এবং শয়তানের জগতে বাস করছি, তাই আমাদের প্রতি ক্লেশ ঘটতেই থাকবে। (১ যোহন ৫:১৯) কিন্তু, সাহায্যের পথ খোলা রয়েছে। আমরা “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। হান্না ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি হৃদয় উজাড় করে যিহোবাকে নিজের অনুভূতির কথা বলেছিলেন এবং তাঁর কাছে সাহায্যভিক্ষা করেছিলেন। একইভাবে, আমরা যখন কষ্ট ভোগ করি, তখন যিহোবার কাছে সমস্যার বিষয়টা কেবল উল্লেখ করার চেয়ে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের তাঁর কাছে সাহায্যভিক্ষা করতে হবে এবং হৃদয় উজাড় করে নিজেদের অনুভূতির কথা তাঁকে বলতে হবে।—ফিলি. ৪:৬, ৭.

১২. কী হান্নাকে ক্লেশের মধ্যেও আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল?

১২ সন্তান না হওয়ার কারণে অথবা মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারানোর কারণে আমরা হয়তো অত্যন্ত দুঃখিত হতে পারি। কিন্তু, এরপরও আমরা সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, যিশুর দিনের হান্নার কথা বিবেচনা করুন। বিয়ের মাত্র সাত বছর পর, তিনি মৃত্যুতে তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। আর মনে হয়, তার কোনো সন্তানও ছিল না। কিন্তু, কী তাকে সাহায্য করেছিল? ‘তিনি ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান করিতেন না।’ এমনকী ৮৪ বছর বয়সেও হান্না প্রার্থনা করার এবং যিহোবার উপাসনা করার জন্য ধর্মধামে যেতেন। (লূক ২:৩৭) এই বিষয়টাই তাকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল এবং ক্লেশের মধ্যেও তাকে আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।

১৩. পরিবারের লোকেরা যদি আমাদের হতাশ করে, তা হলে প্রকৃত বন্ধুরা কীভাবে আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?

১৩ এ ছাড়া, মণ্ডলীতে আমাদের যে-সমস্ত প্রকৃত বন্ধু রয়েছে, তাদের কাছ থেকেও আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। (হিতো. ১৮:২৪) পলা নামে একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তার বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখন তার মা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেন। এতে পলা খুবই দুঃখ পান এবং পরিস্থিতি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু একসময়, অ্যান নামে একজন অগ্রগামী বোন তাকে উৎসাহিত করতে এবং তার প্রতি প্রেমময় আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। পলা বলেন, ‘যদিও বোন অ্যান আমার আত্মীয়া ছিলেন না কিন্তু তিনি আমার প্রতি যে-প্রেমময় চিন্তা দেখিয়েছিলেন, সেটা আমাকে সত্যিই সাহায্য করেছিল। এটা আমাকে যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।’ পরবর্তী সময়, পলার মা পুনরায় যিহোবার সেবা করতে শুরু করেন আর এতে পলা খুবই আনন্দিত হন। বোন অ্যানও খুব খুশি যে, তিনি পলাকে যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পেরেছেন।

১৪. আমরা যখন অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করি, তখন আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

১৪ আমরা যখন অন্যদের জন্য ভালো কাজ করায় ব্যস্ত থাকি, তখন প্রায়ই আমরা নিজেদের সমস্যাগুলো ভুলে যাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক বিবাহিত বা অবিবাহিত বোন জানে যে, তারা যখন অন্যদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে, তখন তারা যিহোবার সঙ্গে কাজ করে এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করে। এটা তাদের আনন্দিত করে। সত্যি বলতে কী, আমরা সবাই সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারি। আর আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের জন্য সদয় কাজগুলো করি, তখন আমরা তাদের আরও ঘনিষ্ঠ হই। (ফিলি. ২:৪) প্রেরিত পৌল ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি অন্যদের যত্ন নিয়েছিলেন, ঠিক যেমন “স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে।” এ ছাড়া, পৌল তার ভাইদের সান্ত্বনা ও উৎসাহ প্রদান করেছিলেন, ঠিক যেমন একজন ‘পিতা আপন সন্তানদিগের’ প্রতি করেন।—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:৭, ১১, ১২.

পরিবারের মধ্যে সান্ত্বনা

১৫. অল্পবয়সিদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কাদের?

১৫ কীভাবে আমরা মণ্ডলীর পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি? কখনো কখনো নতুন ব্যক্তিরা হয়তো আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে পারে, যাতে আমরা তাদেরকে তাদের সন্তানদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে সাহায্য করি। অথবা তারা হয়তো আমাদের এমনকী তাদের অল্পবয়সি সন্তানদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার বিষয়েও বলতে পারে। বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। (হিতো. ২৩:২২; ইফি. ৬:১-৪) যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যেরা সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন বাবা-মায়েরা নিজেরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেন। বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে কথা বলতে হবে।

১৬. সন্তানদের সাহায্য করার সময় আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৬ যখন কোনো বাবা অথবা মা তাদের সন্তানের সঙ্গে আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন করতে বলেন, তখন আমাদের জন্য এই বিষয়টা মনে রাখা উত্তম হবে যে, সেই সন্তানের উপর আমাদের তার বাবা-মায়ের মতো অধিকার নেই। কখনো কখনো আমরা হয়তো এমন সন্তানের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে পারি, যার বাবা-মা সত্যে নেই। আমরা যখন অন্যের সন্তানদের সঙ্গে অধ্যয়ন করি, তখন তাদের বাবা-মা অথবা অন্য কোনো পরিপক্ব সাক্ষির উপস্থিতিতে তাদের বাড়িতে অধ্যয়ন করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। কিংবা জনসাধারণের কোনো স্থানে অধ্যয়ন করাও বিজ্ঞতার কাজ হবে। এভাবে, আমরা কাউকে কোনো ভুল ধারণা দেব না। আর একসময়, বাবা-মায়েরা হয়তো নিজেরা তাদের সন্তানদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে সমর্থ হবে।

১৭. কীভাবে সন্তানরা পরিবারে অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?

১৭ যে-অল্পবয়সিরা যিহোবাকে ভালোবাসতে শিখেছে, তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও উৎসাহ প্রদান করতে পারে। কীভাবে? তারা তাদের বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান দেখানোর এবং ব্যাবহারিক উপায়ে তাদের সাহায্য করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে তা করতে পারে। এ ছাড়া, সন্তানরা যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তখন তাদের পুরো পরিবার উৎসাহিত হয়। জলপ্লাবনের আগে লেমক নামে একজন ব্যক্তি যিহোবার উপাসনা করতেন। তিনি তার পুত্র নোহের বিষয়ে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে আমাদের যে শ্রম ও হস্তের ক্লেশ হয়, তদ্বিষয়ে এ আমাদিগকে সান্ত্বনা করিবে।” এই ভবিষ্যদ্‌বাণী সেইসময় পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন জলপ্লাবনের পর যিহোবা ভূমিকে অভিশাপমুক্ত করেছিলেন। (আদি. ৫:২৮, ২৯; ৮:২১) বর্তমানে, যে-সমস্ত সন্তানরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তারাও তাদের পরিবারের লোকেদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে। তারা এখন ও ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের সকলকে বিভিন্ন ক্লেশ সহ্য করায় সাহায্য করতে পারে।

১৮. কী আমাদের যেকোনো ক্লেশ সহ্য করায় সাহায্য করতে পারে?

১৮ বর্তমানে, যিহোবার লোকেরা প্রার্থনা করার, বাইবেলের উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করার এবং তাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৫:১৮, ১৯.) আমরা জানি, যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য সবসময় তৈরি রয়েছেন এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি আমাদের যেকোনো ক্লেশ সহ্য করতে সাহায্য করবেন!