সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্বামীরা—খ্রিস্টের মস্তকপদকে স্বীকার করুন

স্বামীরা—খ্রিস্টের মস্তকপদকে স্বীকার করুন

স্বামীরা—খ্রিস্টের মস্তকপদকে স্বীকার করুন

“প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট।”—১ করিন্থীয় ১১:৩.

১, ২. (ক) কীভাবে একজন স্বামীর সাফল্যকে বিচার করা যেতে পারে? (খ) কেন এটা স্বীকার করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, বিয়ের উৎস হলেন ঈশ্বর?

 একজন স্বামীর সাফল্যকে আপনি কীভাবে বিচার করবেন? তার মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতার মাধ্যমে? অথবা তার টাকাপয়সা কামানোর ক্ষমতার মাধ্যমে? নাকি বিশেষভাবে তার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের সঙ্গে তিনি যে-প্রেমময় ও সদয় উপায়ে আচরণ করেন, সেটার মাধ্যমে? শেষের বিষয়টার ক্ষেত্রে অনেক স্বামী এই গুণগুলো দেখাতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা জগতের আত্মা এবং মানব মানগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। কেন? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কারণ হচ্ছে যে, তারা বিয়ের উদ্যোক্তার নির্দেশনা স্বীকার ও তা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়, যিনি “আদম হইতে গৃহীত . . . পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্ম্মাণ করিলেন ও তাঁহাকে আদমের নিকটে আনিলেন।”—আদিপুস্তক ২:২১-২৪.

যিশু খ্রিস্ট বিয়ের ঐশিক উৎস সম্বন্ধে বাইবেলের এই বিবরণকে সত্য বলে স্বীকার করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর দিনের সমালোচকদের এই কথাগুলো বলেছিলেন: “তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, ‘এই কারণ মনুষ্য পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে’? সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর [বিয়ের মাধ্যমে] যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৪-৬) প্রকৃত বিষয়টা হল, সফল বিয়ে উপভোগ করার চাবিকাঠি হচ্ছে এই বিষয়টা স্বীকার করা যে, বিয়ের উৎস হলেন ঈশ্বর আর ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে প্রাপ্ত নির্দেশনা প্রয়োগ করার ওপরই সাফল্য নির্ভর করে।

একজন স্বামীর সাফল্যের চাবিকাঠি

৩, ৪. (ক) কোন বিষয়টা যিশুকে বিয়ে সম্বন্ধে জ্ঞানবান করে তোলে? (খ) যিশুর রূপক স্ত্রী কে এবং স্ত্রীদের সঙ্গে স্বামীদের কীভাবে আচরণ করা উচিত?

একজন স্বামী হিসেবে সফল হওয়ার একটা সহায়ক হল, যিশু যা বলেছিলেন তা অধ্যয়ন করা এবং তিনি যা করেছিলেন, তা কাজে লাগানো। এই সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান অত্যন্ত গভীর ছিল কারণ প্রথম মানব দম্পতি সৃষ্টির ও তাদের বিয়ের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। যিহোবা ঈশ্বর তাঁকে বলেছিলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” (আদিপুস্তক ১:২৬) হ্যাঁ, ঈশ্বর সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, যাঁকে তিনি যেকারো অথবা যেকোনোকিছুর আগে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যিনি “তাঁহার কাছে কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” ছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:২২-৩০) তিনি হচ্ছেন, “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত।” তিনি “ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি” আর এমনকি ভৌত নিখিলবিশ্ব সৃষ্টির আগে অস্তিত্বে ছিলেন।—কলসীয় ১:১৫; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪.

যিশুকে বলা হয় “ঈশ্বরের মেষশাবক” আর তাঁকে রূপকভাবে একজন স্বামী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। একবার একজন দূত বলেছিলেন: “আইস, আমি তোমাকে সেই কন্যাকে, মেষশাবকের ভার্য্যাকে দেখাই।” (যোহন ১:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৯) তা হলে, সেই কন্যা বা কনে অথবা ভার্য্যা বা স্ত্রী কে? ‘মেষশাবকের ভার্য্যা’ আত্মায় অভিষিক্ত বিশ্বস্ত অনুসারীদের নিয়ে গঠিত, যারা তাঁর স্বর্গীয় শাসনে তাঁর সঙ্গে শাসন করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩) তাই, পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যিশু যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে, সেই বিষয়ে এক আদর্শ জোগায়।

৫. কাদের জন্য যিশু এক আদর্শ?

সত্যিই, বাইবেলে যিশুকে তাঁর সমস্ত অনুসারীর জন্য এক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যেমনটা আমরা পড়ি: “খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) তবে, তিনি মূলত পুরুষদের জন্য এক আদর্শ। বাইবেল বলে: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) যেহেতু খ্রিস্ট হলেন পুরুষের মস্তক, তাই স্বামীদের তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করতে হবে। অতএব, পরিবার যদি সাফল্য ও সুখ পেতে চায়, তা হলে মস্তকপদের নীতিকে কাজে লাগাতে হবে। এইজন্য, স্বামীদের এমন প্রেমময় উপায়ে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে, যেভাবে যিশু তাঁর রূপক স্ত্রী অর্থাৎ তাঁর অভিষিক্ত শিষ্যদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন।

বৈবাহিক সমস্যাগুলোকে যেভাবে মোকাবিলা করা যায়

৬. স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কীভাবে বাস করা উচিত?

আজকের সমস্যাপূর্ণ জগতে, স্বামীদের বিশেষভাবে ধৈর্য, প্রেম এবং ধার্মিক নীতিগুলো তুলে ধরার ব্যাপারে দৃঢ়তার ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যিশু যে-আদর্শ রেখে গিয়েছেন, সেই সম্বন্ধে আমরা বাইবেলে পড়ি: ‘হে স্বামিগণ, [তোমাদের স্ত্রীদের] সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর।’ (১ পিতর ৩:৭) হ্যাঁ, স্বামীদের জ্ঞানপূর্বক বৈবাহিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো মোকাবিলা করতে হবে, ঠিক যেমন যিশু সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করেছিলেন। অন্য যেকোনো মানুষের চেয়ে তিনি অনেক পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন কিন্তু তিনি জানতেন যে, এগুলোর জন্য দায়ী ছিল শয়তান, তার মন্দ দূতেরা এবং এই মন্দ জগৎ। (যোহন ১৪:৩০; ইফিষীয় ৬:১২) পরীক্ষাগুলোর কারণে যিশু কখনো অবাক হননি, তাই বিবাহসাথিরা যখন “দৈহিক ক্লেশ” ভোগ করে, তখন তাদেরও অবাক হওয়া উচিত নয়। বাইবেল সাবধান করে যে, যারা বিয়ে করে তারা আশা করতে পারে যে, এই ধরনের ক্লেশ আসবেই।—১ করিন্থীয় ৭:২৮.

৭, ৮. (ক) স্ত্রীদের সঙ্গে জ্ঞানপূর্বক বাস করার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) কেন স্ত্রীরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য?

বাইবেল বলে যে, স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে “জ্ঞানপূর্বক” বাস করা, ‘স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সমাদর করা।’ (১ পিতর ৩:৭) পুরুষরা সাধারণত যেমনটা করবে বলে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সেই অনুযায়ী তার স্ত্রীর ওপর কঠোরভাবে কর্তৃত্ব করার পরিবর্তে, ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করেন এমন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর বা সম্মান করবে। (আদিপুস্তক ৩:১৬) স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করতে চাইবেন যে, তিনি তাকে পুরস্কৃত এক অধিকার হিসেবে পেয়েছেন, কখনো নিজের অপেক্ষাকৃত অধিক দৈহিক শক্তিকে তাকে আঘাত দেওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন না। বরং, তিনি স্ত্রীর অনুভূতিগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করবেন, সবসময় তার সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে আচরণ করবেন।

কেন স্বামীদের তাদের স্ত্রীদেরকে সঠিকভাবে সম্মান করা উচিত? বাইবেল উত্তর দেয়: ‘তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জান; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।’ (১ পিতর ৩:৭) স্বামীদের বুঝতে হবে যে, যিহোবা একজন পুরুষের উপাসনাকে একজন নারীর উপাসনার চেয়ে বড় করে দেখেন না। যে-নারীরা ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য তারাও পুরুষদের মতো একই অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করবে—অনেকে এমনকি স্বর্গীয় জীবন উপভোগ করছে, যেখানে “নর ও নারী আর হইতে পারে না।” (গালাতীয় ৩:২৮) তাই, স্বামীদের মনে রাখতে হবে যে, একজন ব্যক্তির বিশ্বস্ততাই তাকে ঈশ্বরের কাছে মূল্যবান করে তোলে। তা সেই ব্যক্তি কোনো পুরুষ বা নারী, স্বামী বা স্ত্রী অথবা এমনকি ছোট ছেলেমেয়ে যে-ই হোক না কেন।—১ করিন্থীয় ৪:২.

৯. (ক) পিতরের কথা অনুসারে, কোন কারণে স্বামীদের তাদের স্ত্রীদেরকে সম্মান করা উচিত? (খ) কীভাবে যিশু নারীদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন?

স্বামীকে তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করার আবশ্যকতা সম্বন্ধে প্রেরিত পিতরের এই শেষ কথাগুলোর মধ্যে জোর দেওয়া হয়েছে যে, “যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” এই ধরনের রুদ্ধ হওয়া কত বিপদজনকই না হতে পারে! এটা এমনকি একজন স্বামীর প্রার্থনাকে আচ্ছাদন করে দিতে পারে, যেমনটা অতীতে ঈশ্বরের কিছু অবজ্ঞাপূর্ণ দাসদের বেলায় ঘটেছিল। (বিলাপ ৩:৪৩, ৪৪) এটা বিজ্ঞতার কাজ যে, খ্রিস্টান পুরুষরা—বিবাহিত ও বিয়ে করার জন্য চিন্তা করছে এমন উভয় পুরুষই—সেই মর্যাদাপূর্ণ উপায় সম্বন্ধে অধ্যয়ন করবে, যে-উপায়ে যিশু নারীদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে তাঁর সঙ্গে পরিচর্যা করছিল এমন দলে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে সদয়ভাবে ও সম্মানপূর্বক ব্যবহার করেছিলেন। একবার, যিশু এমনকি সবচেয়ে চমৎকার সত্য প্রথমে নারীদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন, তাদেরকে বলেছিলেন যেন তারা তা পুরুষদেরকে জানায়!—মথি ২৮:১, ৮-১০; লূক ৮:১-৩.

বিশেষভাবে স্বামীদের জন্য উদাহরণ

১০, ১১. (ক) কেন বিশেষভাবে স্বামীদের যিশুর উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে? (খ) কীভাবে স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের প্রতি প্রেম দেখানো উচিত?

১০ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাইবেল স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ককে খ্রিস্টের সঙ্গে ‘কন্যার’ যে-সম্পর্ক রয়েছে, সেটার সঙ্গে তুলনা করে আর এই কনে হল তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের মণ্ডলী। বাইবেল বলে: “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক।” (ইফিষীয় ৫:২৩) এই কথাগুলোর দ্বারা স্বামীদের সেই মস্তকপদ বা নেতৃত্বপদের পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত হওয়া উচিত, যা যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য জুগিয়েছেন। একমাত্র এই পরীক্ষা করার মাধ্যমেই স্বামীরা সঠিকভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং তাদের স্ত্রীদের জন্য সেই নির্দেশনা, প্রেম ও যত্ন জোগাতে সমর্থ হবে, যেমনটা যিশু তাঁর মণ্ডলীকে জুগিয়েছিলেন।

১১ “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর,” বাইবেল খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দেয় “যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২৫) ইফিষীয়র আগের অধ্যায়ে “মণ্ডলীকে” ‘খ্রীষ্টের দেহ’ বলা হয়েছে। এই রূপক দেহের উভয় লিঙ্গের অনেক সদস্য রয়েছে, যারা সকলে দেহকে কার্যকারীভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। অবশ্য, যিশু হচ্ছেন “দেহের অর্থাৎ মণ্ডলীর মস্তক।”—ইফিষীয় ৪:১২; কলসীয় ১:১৮; ১ করিন্থীয় ১২:১২, ১৩, ২৭.

১২. যিশু তাঁর রূপক দেহের প্রতি কীভাবে প্রেম দেখিয়েছিলেন?

১২ যিশু তাঁর রূপক দেহ অর্থাৎ “মণ্ডলীর” প্রতি মূলত সেই যত্নশীল উপায়ে প্রেম দেখিয়েছেন, যে-উপায়ে তিনি যারা এর সদস্য হবে, তাদের মঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য রেখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর শিষ্যরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, “বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।” (মার্ক ৬:৩১) তাঁর মৃত্যুদণ্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে যিশুর কাজ সম্বন্ধে তাঁর একজন প্রেরিত লিখেছিলেন: “আপনার নিজস্ব যে লোকদিগকে [অর্থাৎ তাঁর রূপক দেহের সদস্যদেরকে] প্রেম করিতেন, তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।” (যোহন ১৩:১) স্ত্রীদের সঙ্গে স্বামীদের কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু কী এক চমৎকার উদাহরণই না জুগিয়েছেন!

১৩. স্ত্রীদের প্রেম করার জন্য স্বামীদের কীভাবে উপদেশ দেওয়া হয়েছে?

১৩ স্বামীদের জন্য যিশু যে-উদাহরণ স্থাপন করেছেন, সেটার প্রতি ক্রমাগত মনোযোগ আকর্ষণ করিয়ে প্রেরিত পৌল তাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন: “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।” পৌল আরও বলেছিলেন: “তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।”—ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯, ৩৩.

১৪. একজন স্বামী তার অসিদ্ধ দেহের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন এবং এটা তার স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত, সেই সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়?

১৪ পৌলের কথাগুলো চিন্তা করে দেখুন। সুস্থমস্তিষ্কের একজন পুরুষ কি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে তার নিজ দেহকে আঘাত করেন? একজন পুরুষ যখন হোঁচট খান, তখন তিনি কি তার পায়ের আঙুলগুলোর কারণে হোঁচট খেয়েছেন বলে সেগুলোকে আঘাত করেন? অবশ্যই না! একজন স্বামী কি নিজেকে তার বন্ধুবান্ধবের সামনে হেয় করেন অথবা তার নিজের ভুলগুলো সম্বন্ধে সমালোচনা করেন? কখনোই না! তা হলে, কেন তিনি তার স্ত্রীকে কথাবার্তার দ্বারা অথবা তার স্ত্রী যদি কোনো ভুল করে থাকেন তখন এর চেয়েও খারাপ কিছুর দ্বারা আক্রমণ করবেন? স্বামীদের কেবল তাদের নিজেদের বিষয়েই নয় কিন্তু তাদের স্ত্রীদের বিষয়েও বিবেচনা করা উচিত।—১ করিন্থীয় ১০:২৪; ১৩:৫.

১৫. (ক) তাঁর শিষ্যরা যখন মানব দুর্বলতা দেখিয়েছিল, তখন যিশু কী করেছিলেন? (খ) তাঁর উদাহরণ থেকে কোন কোন শিক্ষা পাওয়া যেতে পারে?

১৫ যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে, যখন তাঁর শিষ্যরা মানব দুর্বলতা দেখিয়েছিল, তখন তাদের জন্য কীভাবে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তাদেরকে প্রার্থনা করার জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, গেৎশিমানী বাগানে তারা তিনবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। আকস্মিকভাবে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছিল। যিশু সেই ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কাহার অন্বেষণ করিতেছ?” তারা যখন উত্তর দিয়েছিল: “নাসরতীয় যীশুর,” তখন তিনি বলেছিলেন: “আমিই তিনি।” তাঁর মৃত্যুর “সময় উপস্থিত” জেনে তিনি বলেছিলেন: “অতএব তোমরা যদি আমার অন্বেষণ কর, তবে ইহাদিগকে যাইতে দেও।” যিশু কখনোই তাঁর শিষ্যদের—তাঁর রূপক কনের অংশের—মঙ্গলের বিষয়ে বিবেচনা দেখাতে ব্যর্থ হননি এবং তিনি তাদের রক্ষার জন্য পথ করে দিয়েছিলেন। যিশু কীভাবে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, তা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে স্বামীরা এমন অনেক নীতি খুঁজে পাবে, যেগুলো তারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা উচিত, সেই ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে।—যোহন ১৮:১-৯; মার্ক ১৪:৩৪-৩৭, ৪১.

যিশুর প্রেম কেবল আবেগগত নয়

১৬. মার্থার প্রতি যিশুর অনুভূতি কেমন ছিল কিন্তু কীভাবে তিনি তাকে সংশোধন করেছিলেন?

১৬ বাইবেল বলে: “যীশু মার্থাকে ও তাঁহার ভগিনীকে এবং লাসারকে প্রেম করিতেন,” যারা প্রায়ই তাঁকে তাদের বাড়িতে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করত। (যোহন ১১:৫) কিন্তু, যিশু মার্থাকে সেই সময়ে পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত হননি, যখন মার্থা যে-খাবার প্রস্তুত করছিলেন, সেটার প্রতি অত্যাধিক মনোযোগ দিয়েছিলেন আর এভাবে যিশুর কাছ থেকে তার আধ্যাত্মিক নির্দেশনা লাভ করার সময়কে সীমিত করে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন আছ; কিন্তু অল্প কএকটী বিষয়, বরং একটী মাত্র বিষয় আবশ্যক।” (লূক ১০:৪১, ৪২) কোনো সন্দেহ নেই যে, মার্থার প্রতি তাঁর স্পষ্ট স্নেহের কারণে মার্থার পক্ষে পরামর্শ গ্রহণ করা সহজ হয়েছিল। একইভাবে, স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদয়, প্রেমময় উপায়ে, ভেবেচিন্তে বাছাই করা শব্দ ব্যবহার করে আচরণ করা উচিত। তবে, যখন সংশোধন করার প্রয়োজন, তখন যিশুর মতো খোলাখুলিভাবে কথা বলা উপযুক্ত।

১৭, ১৮. (ক) পিতর কীভাবে যিশুকে অনুযোগ করেছিলেন এবং কেন পিতরের সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছিল? (খ) একজন স্বামীর কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৭ আরেকবার, যিশু তাঁর প্রেরিতদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তাঁকে যিরূশালেমে যেতে হবে, যেখানে তাঁকে “প্রাচীনবর্গের, প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হইতে” তাড়িত হতে “ও হত হইতে হইবে, আর তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে।” এই কথা বলায় পিতর যিশুকে কাছে নিয়ে অনুযোগ করে বলেছিলেন: “প্রভু, ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক, ইহা আপনার প্রতি কখনও ঘটিবে না।” স্পষ্টতই, পিতরের দৃষ্টিভঙ্গি আবেগের দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছিল। তাই, যিশু তাঁকে বলেছিলেন: “আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান, তুমি আমার বিঘ্নস্বরূপ; কেননা যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের, তাহাই তুমি ভাবিতেছ।”—মথি ১৬:২১-২৩.

১৮ যিশু সবেমাত্র ঐশিক ইচ্ছা সম্বন্ধে—মূলত তাঁকে যে অনেক বিষয় ভোগ করতে ও হত হতে হবে, সেই সম্বন্ধে—বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৬:১০; যিশাইয় ৫৩:১২) তাই, যিশুকে অনুযোগ করতে শুরু করে পিতর ভুল করেছিলেন। হ্যাঁ, পিতরের দৃঢ় সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছিল, যা আমাদের সকলেরই মাঝে মাঝে প্রয়োজন হয়। পরিবারের মস্তক হিসেবে, স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সংশোধন করার অধিকার ও দায়িত্ব স্বামীর রয়েছে। যদিও দৃঢ়তার প্রয়োজন কিন্তু এই সংশোধন সদয় ও প্রেমময় উপায়ে করা উচিত। তাই, যিশু যেমন পিতরকে বিষয়গুলো সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করেছিলেন, তেমনই স্বামীদেরও তাদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে একইরকম করার প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্ত্রীর পোশাক অথবা অলঙ্কার বা সাজগোজ যদি শাস্ত্রে সুপারিশকৃত মার্জিত আদর্শ থেকে অন্যদিকে যেতে থাকে, তা হলে স্বামীদের হয়তো সদয়ভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন হতে পারে যে, কেন কিছু রদবদল করা দরকার।—১ পিতর ৩:৩-৫.

স্বামীদের জন্য ধৈর্যশীল হওয়া উত্তম

১৯, ২০. (ক) যিশুর প্রেরিতদের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং যিশু সেটাকে কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন? (খ) যিশুর প্রচেষ্টা কতটা সফল ছিল?

১৯ যদি কোনো ভুলের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তা হলে স্বামীদের এইরকম আশা করা উচিত নয় যে, তা সংশোধন করার বিষয়ে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য লাভ করবে। তাঁর প্রেরিতদের মনোভাবকে রদবদল করার জন্য যিশুকে ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, তাদের মধ্যে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছিল, তা যিশুর পরিচর্যার শেষের দিকে আবারও দেখা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, সেই বিষয়টা নিয়ে তারা তর্কবিতর্ক করেছিল। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭; ১০:৩৫-৪৫) দ্বিতীয় বার এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর শীঘ্রই, যিশু তাদের সঙ্গে তাঁর শেষ নিস্তারপর্ব একান্তে উদ্‌যাপন করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সময়ে, তাদের মধ্যে একজনও অন্যদের ময়লা পা ধুইয়ে দেওয়ার রীতিগত নীচু কাজ করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে আসেনি। যিশু তা করেছিলেন। এরপর তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম।”—যোহন ১৩:২-১৫.

২০ যে-স্বামীরা যিশুর মতো নম্র মনোভাব দেখিয়ে থাকে, তাদের হয়তো তাদের স্ত্রীদের সহযোগিতা ও সমর্থন রয়েছে। কিন্তু, ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে। সেই নিস্তারপর্বের রাতের কিছু সময় পরেই তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, সেই সম্বন্ধে প্রেরিতরা আবারও তর্কবিতর্ক করেছিল। (লূক ২২:২৪) মনোভাব ও আচরণে পরিবর্তন আনার জন্য প্রায়ই সময়ের প্রয়োজন আর তা ধীরে ধীরে হয়। কিন্তু, যখন ইতিবাচক ফলাফল লাভ করা যায়, যেমনটা প্রেরিতদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল, তখন তা কতই না পুরস্কারজনক হয়!

২১. আজকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখে স্বামীদের কী মনে রাখার ও কী করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

২১ আজকে, বিয়ে আগের চেয়ে আরও বড় বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেকেই তাদের বিয়ের অঙ্গীকারকে আর গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। তাই, স্বামীরা আপনারা বিয়ের উৎস সম্বন্ধে চিন্তা করুন। মনে রাখবেন যে, বিয়ের উৎস হচ্ছেন ঈশ্বর আর তা আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার দ্বারা উদ্ভূত ও প্রবর্তিত। তিনি তাঁর পুত্র যিশুকে কেবল আমাদের মুক্তিদাতা—আমাদের পরিত্রাতা—হিসেবেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে স্বামীদের জন্য অনুকরণযোগ্য এক আদর্শ হিসেবেও জুগিয়েছেন।—মথি ২০:২৮; যোহন ৩:২৯; ১ পিতর ২:২১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমাদের জন্য বিয়ের উৎস সম্বন্ধে বোঝা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

• কোন কোন উপায়ে স্বামীদেরকে তাদের স্ত্রীদের প্রেম করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে?

• যিশুর শিষ্যদের সঙ্গে তাঁর আচরণের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, একজন স্বামীর কীভাবে খ্রিস্টতুল্য মস্তকপদ ব্যবহার করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু যেভাবে স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, সেই উদাহরণ কেন স্বামীদের অধ্যয়ন করা উচিত?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

তাঁর শিষ্যরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তখন যিশু বিবেচনা দেখিয়েছিলেন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্বামীদের সদয় ও ভালভাবে বাছাই করা শব্দের মাধ্যমে তাদের স্ত্রীদের পরামর্শ দেওয়া উচিত