সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা কি সত্যিই ঈশ্বরের সন্ধান পেতে পারি?

আমরা কি সত্যিই ঈশ্বরের সন্ধান পেতে পারি?

“ঈশ্বর হলেন বোধের অগম্য।” —আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলো, প্রথম শতাব্দীর একজন দার্শনিক।

“[ঈশ্বর] আমাদের কারও কাছ থেকে দূরে নন।” —তার্ষের শৌল, এথেন্সে প্রথম শতাব্দীর দার্শনিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন।

উপরে দেওয়া দুটো উক্তির মধ্যে আপনি কোনটার সঙ্গে একমত? অনেকে তার্ষের শৌলের উক্তিকে সান্ত্বনাদায়ক এবং হৃদয়স্পর্শী বলে মনে করে, যিনি প্রেরিত পৌল হিসেবেও পরিচিত। (প্রেরিত ১৭:২৬, ২৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) বাইবেলে এই ধরনের আরও অনেক আশ্বাসজনক বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, যিশুর এক প্রার্থনায় এই উৎসাহজনক আশ্বাস পাওয়া যায়, তাঁর অনুসারীদের পক্ষে ঈশ্বরকে জানা এবং তাঁর আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব।—যোহন ১৭:৩.

তবে, ফাইলোর মতো কোনো কোনো দার্শনিকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ছিল। তাদের মতে, আমরা কখনোই ঈশ্বরকে জানতে পারব না কারণ তিনি হলেন বোধের অগম্য। তা হলে, আসল সত্যটা কী?

বাইবেল খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে, ঈশ্বর সম্বন্ধে এমন কিছু বিষয় আছে, যা মানুষের পক্ষে বোঝা খুবই কঠিন। যেমন, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের শুরু ও শেষ, তাঁর বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার গভীরতা হিসাব করা, পরিমাপ করা কিংবা বোঝা। এক কথায় বললে, এগুলো মানুষের বোধের অগম্য। তবে, ঈশ্বরকে জানার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে কোনো বাধাই নয়। আসলে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী” হতে সাহায্য করে। (যাকোব ৪:৮) প্রথমে আসুন, আমরা এইরকম কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি, যেগুলো বোধের অগম্য। আর তারপর, আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে এমন কয়েকটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমরা সত্যিই বুঝতে পারি।

কোন কোন বিষয় বোধের অগম্য?

ঈশ্বরের অনন্ত অস্তিত্ব: বাইবেল জানায়, ঈশ্বর “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল” ধরে অস্তিত্বে রয়েছেন। (গীতসংহিতা ৯০:২) আরেকভাবে বললে, ঈশ্বরের কোনো শুরু নেই আর তাঁর কোনো শেষও নেই। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে “তাহার বর্ষ-সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায় না।”—ইয়োব ৩৬:২৬.

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, আপনি যদি সত্যিই তাঁকে জানেন, তা হলে তিনি আপনাকে অনন্তজীবন দেবেন। (যোহন ১৭:৩) ঈশ্বর নিজেই যদি অনন্তকাল বেঁচে না থাকেন, তা হলে এই প্রতিজ্ঞা কী আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? শুধুমাত্র “যুগপর্য্যায়ের রাজা” এই ধরনের প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন।—১ তীমথিয় ১:১৭.

ঈশ্বরের মন: বাইবেল শিক্ষা দেয়, ঈশ্বরের “বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না” কারণ তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদের থেকে অনেক উচ্চ। (যিশাইয় ৪০:২৮; ৫৫:৯) আর ঠিক এই কারণেই বাইবেল বলে: “কে প্রভুর মন জানিয়াছে যে, তাঁহাকে উপদেশ দিতে পারে?”—১ করিন্থীয় ২:১৬.

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: ঈশ্বর একই সময়ে লক্ষ লক্ষ লোকের প্রার্থনা শুনতে পারেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) তিনি এমনকী প্রত্যেকটা চড়াই পাখিকে লক্ষ করেন, যেগুলো মাটিতে পড়ে। ঈশ্বরের মন বা স্মৃতিশক্তি কি কখনো এতটাই পূর্ণ হয়ে যেতে পারে যে, আপনাকে লক্ষ করা এবং আপনার প্রার্থনা শোনা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে? কখনোই না। এর কারণ হল, ঈশ্বরের অসীম স্মৃতিশক্তি রয়েছে। আর এর চেয়ে বড়ো বিষয় হল, ‘আপনি অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।’—মথি ১০:২৯, ৩১.

ঈশ্বরের পথ: বাইবেল শিক্ষা দেয়, “ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারে না।” (উপদেশক ৩:১১) আর তাই, আমরা কখনোই ঈশ্বরের বিষয়ে সমস্তকিছু জানতে পারব না। ঈশ্বরের পথের পিছনে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, তা “অননুসন্ধেয়।” (রোমীয় ১১:৩৩) তবে, ঈশ্বর সেইসমস্ত ব্যক্তির কাছে তাঁর পথ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক, যারা তাঁকে খুশি করতে চায়।—আমোষ ৩:৭.

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের শুরু ও শেষ, তাঁর বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার গভীরতা হিসাব করা, পরিমাপ করা কিংবা বোঝা সম্ভব নয়

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: আপনি যদি বাইবেল পড়েন ও অধ্যয়ন করেন, তা হলে আপনি ঈশ্বর ও তাঁর পথ সম্বন্ধে ক্রমাগত নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারবেন। এর অর্থ হল, আমরা অনন্তকাল ধরে আমাদের স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী হতে পারব।

আপনি যা জানতে পারেন

ঈশ্বর সম্বন্ধে কোনো কোনো বিষয় সম্পূর্ণভাবে বুঝতে না পারার অর্থ এই নয় যে, আমরা কখনোই তাঁকে জানতে পারব না। বাইবেলে এমন প্রচুর তথ্য রয়েছে, যা ঈশ্বরকে আরও ভালোভাবে জানার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা  করুন:

ঈশ্বরের নাম: বাইবেল আমাদের জানায়, ঈশ্বরের একটা ব্যক্তিগত নাম আছে। ঈশ্বর বলেন, “আমি সদাপ্রভু, ইহাই আমার নাম।” বাইবেলে প্রায় ৭,০০০ বার ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম রয়েছে। *যিশাইয় ৪২:৮.

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: যিশু তাঁর আদর্শ প্রার্থনায় বলেছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) আপনিও কি প্রার্থনায় ঈশ্বরের  নাম ব্যবহার করতে পারেন? যিহোবা এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে রক্ষা করতে ইচ্ছুক, যারা তাঁর নামের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করে।—রোমীয় ১০:১৩.

ঈশ্বরের নিবাসস্থান: বাইবেল দুটো নিবাসস্থান সম্বন্ধে জানায়—পৃথিবী ও স্বর্গ। পৃথিবী, যেখানে আমরা বসবাস করি এবং স্বর্গ, যেখানে আত্মিক প্রাণীরা বসবাস করে। (যোহন ৮:২৩; ১  করিন্থীয়  ১৫:৪৪) সৃষ্টিকর্তার “নিবাস-স্থান” হল ‘স্বর্গ।’—১ রাজাবলি ৮:৪৩.

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: আপনি ঈশ্বর সম্বন্ধে এক স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা কোনো রহস্যময় শক্তি নন, যিনি সর্বত্র এবং সমস্তকিছুর মধ্যে থাকবেন। যিহোবা হলেন একজন বাস্তব ব্যক্তি, যাঁর প্রকৃত নিবাসস্থান রয়েছে। তা  সত্ত্বেও,  “তাঁহার  সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়।”—ইব্রীয় ৪:১৩.

ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব: বাইবেল শিক্ষা দেয়, যিহোবার চমৎকার গুণাবলি রয়েছে। “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। (তীত ১:২) তিনি পক্ষপাতিত্ব করেন না; তিনি স্নেহশীল, কৃপাময় এবং ক্রোধে ধীর। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; প্রেরিত ১০:৩৪) এটা হয়তো অনেকের কাছে আশ্চর্যজনক বলে মনে হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা সেইসমস্ত ব্যক্তিদের নিকটবর্তী হতে চান, যারা তাঁকে সম্মান দেখায়।—যাকোব ৪:৮.

আপনি যেভাবে উপকৃত হতে পারেন: আপনি যিহোবার বন্ধু হতে পারেন। (যাকোব ২:২৩) আপনি যত বেশি যিহোবার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে  জানবেন, তত ভালোভাবে বাইবেলের বিবরণগুলো বুঝতে  পারবেন।

“তাঁহার অন্বেষণ কর”

যিহোবা ঈশ্বর কেমন, বাইবেল তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তিনি কখনোই বোধের অগম্য নন। আসলে, সৃষ্টিকর্তা চান যেন আপনি তাঁর সম্বন্ধে জানেন। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “তুমি যদি তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন।” (১ বংশাবলি ২৮:৯) বাইবেলের বিবরণগুলো পড়ার এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও জানুন না কেন? আপনি যদি তা করেন, তবে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে, ঈশ্বর ‘আপনার নিকটবর্ত্তী হইবেন।’—যাকোব ৪:৮.

আপনি যদি বাইবেল পড়েন ও অধ্যয়ন করেন, তা হলে আপনি ঈশ্বর ও তাঁর পথ সম্বন্ধে ক্রমাগত নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারবেন

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘আমি যেহেতু সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে সমস্তকিছু জানতে পারি না, তা হলে কীভাবে আমি তাঁর বন্ধু হতে পারি?’ এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: একজন ডাক্তারের প্রিয় বন্ধু হওয়ার জন্য কি একজন ব্যক্তিকে ডাক্তার হতে হবে? অবশ্যই না! সেই ডাক্তারের বন্ধুর হয়তো একেবারে ভিন্ন পেশা থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখা সম্ভব। যে বিষয়টা সত্যিই দরকার তা হল, সেই ডাক্তারের ব্যক্তিত্ব আর সেইসঙ্গে তিনি কী পছন্দ করেন আর কী অপছন্দ করেন, তা জানা। ঠিক একইভাবে, আপনি বাইবেল থেকে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারেন আর তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য ঠিক এটাই প্রয়োজন।

সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে অস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার পরিবর্তে, বাইবেল আমাদের এমন তথ্যগুলো প্রদান করে, যেগুলোর সাহায্যে আমরা ঈশ্বরকে জানতে পারি। আপনি কি যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও জানতে চান? যিহোবার সাক্ষিরা বিনা মূল্যে বাইবেল অধ্যয়ন করিয়ে থাকে। আমরা আপনাকে আপনার এলাকার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অথবা আমাদের ওয়েবসাইট, www.ps8318.com দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ▪ (w১৫-E ১০/০১)

^ অনু. 16 কোনো কোনো বাইবেল অনুবাদ ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম যিহোবা ব্যবহার করার পরিবর্তে “সদাপ্রভু” উপাধিটা ব্যবহার করে। কেন এই উপাধি ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ১৯৫ পৃষ্ঠা দেখুন। এই বইটা jw.org ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে।