প্রেরিতদের কার্যবিবরণ ২:১-৪৭
২ পরে পঞ্চাশত্তমীর উৎসবের দিন তারা সকলে একই জায়গায় একসঙ্গে ছিলেন।
২ সেইসময় হঠাৎ আকাশ থেকে প্রচণ্ড জোরে বাতাস বয়ে যাওয়ার মতো একটা শব্দ হল এবং তারা যেখানে বসে ছিলেন, সেই পুরো ঘরে তা শোনা গেল।
৩ আর তারা আগুনের ছোটো ছোটো শিখার* মতো কিছু দেখতে পেলেন, যেগুলো বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রত্যেকের উপর বসল।
৪ এতে তারা সকলে পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হলেন এবং পবিত্র শক্তি তাদের যেরকম কথা বলার ক্ষমতা দিল, সেই অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন।
৫ সেই সময় পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে ঈশ্বরভয়শীল যিহুদিরা এসে জেরুসালেমে থাকছিল।
৬ তাই, এই শব্দ শুনে সেখানে অনেক লোক জড়ো হল এবং তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় শিষ্যদের কথা বলতে শুনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল।
৭ তারা খুবই অবাক হয়ে বলতে লাগল: “দেখো! এই যে লোকেরা কথা বলছে, এরা সবাই কি গালীলীয় নয়?
৮ তা হলে, কীভাবে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় এদের কথা বলতে শুনছি?
৯ পার্থীয়, মাদীয়, এলমীয়, মেসোপটেমিয়া, যিহূদিয়া, কাপ্পাদকিয়া, পন্ত এবং এশিয়া প্রদেশ,
১০ ফরুগিয়া ও পাম্ফুলিয়া, মিশর এবং কুরীণীর কাছে অবস্থিত লিবিয়া অঞ্চলের লোকেরা, রোম থেকে আসা লোকেরা, যিহুদিরা এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা,
১১ ক্রীতীর লোকেরা, আরবীয়েরা—আমরা তো নিজেদের ভাষায় ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কাজের বিষয়ে এদের কথা বলতে শুনছি।”
১২ তারা সকলে আশ্চর্য ও হতবুদ্ধি হয়ে পরস্পরকে বলতে লাগল: “এসবের অর্থ কী?”
১৩ কিন্তু, অন্যেরা তাদের উপহাস করে বলল: “এরা দ্রাক্ষারস* খেয়ে মাতাল হয়ে গিয়েছে।”
১৪ কিন্তু, পিতর সেই ১১ জনের* সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে লোকদের উচ্চস্বরে বললেন: “যিহূদিয়া ও জেরুসালেমে বসবাসকারী সমস্ত লোক, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো।
১৫ তোমরা যে মনে করছ এই লোকেরা মাতাল, আসলে তা নয়, কারণ এখন বেলা তৃতীয় ঘণ্টা।*
১৬ এর পরিবর্তে, তাদের মধ্য দিয়ে ভাববাদী যোয়েলের এই কথাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে:
১৭ ‘ঈশ্বর বলেছেন, “আর শেষকালে, আমি সমস্ত ধরনের ব্যক্তির উপর আমার পবিত্র শক্তি* বর্ষণ করব আর তোমাদের ছেলেরা ও মেয়েরা ভবিষ্যদ্বাণী বলবে এবং তোমাদের যুবকেরা দর্শন দেখবে আর বৃদ্ধ লোকেরা বিশেষ স্বপ্ন দেখবে।
১৮ আর সেই সময়ে এমনকী আমার দাস ও দাসীদের উপরও আমি আমার পবিত্র শক্তি* বর্ষণ করব এবং তারা ভবিষ্যদ্বাণী বলবে।
১৯ এ ছাড়া, আমি আকাশে বিভিন্ন আশ্চর্য ঘটনা এবং পৃথিবীতে বিভিন্ন অলৌকিক কাজ দেখাব—রক্ত, আগুন ও ধোঁয়া।
২০ যিহোবার* সেই মহৎ ও গৌরবময় দিন আসার আগে সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে এবং চাঁদ রক্ত হয়ে যাবে।
২১ আর যে-কেউ যিহোবার* নামে ডাকবে, সে রক্ষা পাবে।”’
২২ “হে ইজরায়েলের লোকেরা, এই কথাগুলো শোনো: তোমরা যেমন জান, নাসরতীয় যিশুকে ঈশ্বরই পাঠিয়েছিলেন আর তাঁর মাধ্যমে ঈশ্বর অলৌকিক কাজ এবং আশ্চর্য কাজ করেছিলেন, যাতে তোমরা যিশুর পরিচয় জানতে পার।
২৩ এই ব্যক্তিকে তোমরা পাপী লোকদের হাতে তুলে দিয়ে দণ্ডে বিদ্ধ করেছিলে এবং হত্যা করেছিলে, যা ঈশ্বর আগে থেকে জানতেন এবং স্থির করে রেখেছিলেন।
২৪ কিন্তু, পুনরুত্থিত* করার মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন, কারণ তাঁকে ধরে রাখার ক্ষমতা মৃত্যুর ছিল না।
২৫ এইজন্য দায়ূদ যিশু সম্বন্ধে বলেছিলেন: ‘আমি যিহোবাকে* সবসময় আমার সামনে* রাখি, কারণ তিনি আমার ডান দিকে রয়েছেন, যেন আমি কখনো বিচলিত না হই।
২৬ এই কারণে আমার হৃদয় খুশিতে ভরে উঠল এবং আমার জিভ উল্লাস করল। আর আমি প্রত্যাশায় থাকব;*
২৭ কারণ তুমি আমাকে কবরে* ত্যাগ করবে না কিংবা তোমার অনুগত ব্যক্তির দেহ ক্ষয় পেতে দেবে না।
২৮ তুমি আমাকে জীবনের পথ সম্বন্ধে জানিয়েছ; তোমার সান্নিধ্যে* তুমি আমার হৃদয়কে প্রচুর আনন্দে ভরিয়ে দেবে।’
২৯ “ভাইয়েরা, আমি তোমাদের কাছে সেই কুলপতি দায়ূদের বিষয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি, যিনি মারা গিয়েছেন এবং যাকে কবর দেওয়া হয়েছে আর তার কবর এখনও পর্যন্ত এখানে রয়েছে।
৩০ তিনি একজন ভাববাদী ছিলেন এবং তিনি জানতেন, ঈশ্বর তার কাছে এই শপথ করেছেন যে, তারই বংশধরদের মধ্যে একজনকে ঈশ্বর তার সিংহাসনে বসাবেন।
৩১ তিনি আগে থেকেই খ্রিস্টের পুনরুত্থান দেখতে পেয়েছিলেন এবং এই কথা বলেছিলেন, তাঁকে কবরে* পরিত্যাগও করা হবে না কিংবা তাঁর দেহ ক্ষয়ও পাবে না।
৩২ ঈশ্বর এই যিশুকেই পুনরুত্থিত করেছেন আর আমরা সকলে এই বিষয়ের সাক্ষি।
৩৩ যেহেতু তাঁকে ঈশ্বরের ডান দিকে উচ্চীকৃত করা হয়েছে এবং তিনি পিতার কাছ থেকে প্রতিজ্ঞাত পবিত্র শক্তি লাভ করেছেন, তাই তিনি আমাদের উপর তা বর্ষণ করেছেন, যেমনটা তোমরা দেখতে ও শুনতে পাচ্ছ।
৩৪ দায়ূদ স্বর্গে যাননি কিন্তু তিনি নিজে বলেছিলেন, ‘যিহোবা* আমার প্রভুকে বলেন: “তুমি আমার ডান দিকে বসো,
৩৫ যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের নীচে পাদপীঠের* মতো রাখি।”’
৩৬ তাই, ইজরায়েলের সমস্ত লোক, তোমরা এই কথা জেনে রাখ, তোমরা যাঁকে দণ্ডে বিদ্ধ করে মেরে ফেলেছিলে, ঈশ্বর সেই যিশুকেই প্রভু ও খ্রিস্ট করেছেন।”
৩৭ এই কথা শুনে তাদের হৃদয় যেন বিদ্ধ হল আর তারা পিতরকে এবং বাকি প্রেরিতদের জিজ্ঞেস করল: “ভাইয়েরা, আমাদের কী করা উচিত?”
৩৮ পিতর তাদের বললেন: “অনুতপ্ত হও এবং তোমরা প্রত্যেকে পাপের ক্ষমা লাভ করার জন্য যিশু খ্রিস্টের নামে বাপ্তিস্ম নাও; তা হলে তোমরা দান হিসেবে পবিত্র শক্তি লাভ করবে।
৩৯ কারণ এই প্রতিজ্ঞা তোমাদের, তোমাদের সন্তানদের এবং যারা দূরে রয়েছে, তাদের সকলের জন্য, যত ব্যক্তিকে আমাদের ঈশ্বর যিহোবা* তাঁর কাছে ডাকবেন, তাদের সবার জন্য।”
৪০ আরও অনেক কথার মাধ্যমে তিনি তাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিলেন এবং এই উপদেশ দিলেন: “তোমরা এই মন্দ প্রজন্মের লোকদের কাছ থেকে পৃথক হও এবং ধ্বংস থেকে রক্ষা পাও।”
৪১ তাই, যারা আনন্দের সঙ্গে তার কথাগুলো গ্রহণ করল, তারা বাপ্তিস্ম নিল; আর সেই দিন প্রায় ৩,০০০ জন ব্যক্তি শিষ্যদের সঙ্গে যুক্ত হল।
৪২ আর তারা নিয়মিতভাবে প্রেরিতদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত, একসঙ্গে মেলামেশা করত,* খাওয়া-দাওয়া করত এবং প্রার্থনা করত।
৪৩ প্রেরিতেরা অনেক অলৌকিক কাজ এবং আশ্চর্য কাজ করতে লাগলেন আর সেগুলো দেখে সকলের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় জেগে উঠল।
৪৪ যে-ব্যক্তিরা যিশুর অনুসারী হয়েছিল, তারা সবাই একত্রিত হতো এবং একে অন্যের সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নিত।
৪৫ আর তারা নিজেদের বিষয়সম্পত্তি বিক্রি করে যে-টাকাপয়সা পেত, সেখান থেকে প্রত্যেককে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিত।
৪৬ এ ছাড়া, তারা প্রতিদিন একত্রে মন্দিরে উপস্থিত থাকত, একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করত এবং অত্যন্ত আনন্দ ও আন্তরিকতার সঙ্গে খাবার ভাগ করে নিত
৪৭ এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করত। এ ছাড়া, তারা সমস্ত লোকের কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভ করছিল। আর একইসঙ্গে যারা রক্ষা পাচ্ছিল, যিহোবা* সেই লোকদের প্রতিদিন তাদের সঙ্গে যুক্ত করছিলেন।
পাদটীকাগুলো
^ বা “জিভের।”
^ বা “ওয়াইন।”
^ অর্থাৎ সেই ১১ জন প্রেরিত।
^ অর্থাৎ সকাল প্রায় ৯টা।
^ বা “শক্তির এক অংশ।”
^ বা “শক্তির এক অংশ।”
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “চোখের সামনে।”
^ আক্ষ., “আর আমার দেহ প্রত্যাশায় থাকবে।”
^ গ্রিক, হেডিস। শব্দকোষ দেখুন।
^ আক্ষ., “মুখের সামনে।”
^ গ্রিক, হেডিস। শব্দকোষ দেখুন।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ অর্থাৎ পা রাখার টুল।
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “সমস্ত কিছু একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিত।”
^ শব্দকোষ দেখুন।