সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রচ্ছদ বিষয় | প্রিয়জনের মৃত্যু

শোকের সঙ্গে মোকাবিলা করা

শোকের সঙ্গে মোকাবিলা করা

শোকের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, এই বিষয়ে পরামর্শের অভাব নেই। তবে, সব পরামর্শই যে সাহায্যকারী হবে, এমনটা নয়। যেমন, আপনাকে হয়তো কেউ এই পরামর্শ দিতে পারে, ‘কাঁদবেন না’ কিংবা ‘না কেঁদে অন্য কোনোভাবে নিজের দুঃখপ্রকাশ করুন।’ আবার কেউ হয়তো এর বিপরীতটা করার এবং মন খুলে কাঁদার পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু, বাইবেল এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে আর আধুনিক গবেষণা সেটাকে সঠিক বলে মনে করে।

কিছু কিছু সংস্কৃতিতে এমনটা মনে করা হয়, ‘ছেলেদের কাঁদতে নেই।’ কিন্তু চোখের জল ফেলা কি সত্যিই লজ্জাজনক, বিশেষ করে সবার সামনে? মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দুঃখের সময় চোখের জল ফেলা খুবই স্বাভাবিক। আর কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারানোর বেদনা যতই গভীর হোক না কেন, দুঃখপ্রকাশ করা একেক সময় আপনাকে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, কষ্ট চেপে রাখলে উপকারের পরিবর্তে অপকার হয়। বাইবেল কখনো এই ধারণাকে সমর্থন করে না, ‘দুঃখের সময় চোখের জল ফেলা ভুল’ অথবা ‘ছেলেদের কাঁদতে নেই।’ যিশুর কথা চিন্তা করে দেখুন। যিশুর বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তিনি সবার সামনে কেঁদেছিলেন, এমনকী যদিও তিনি জানতেন, মৃত ব্যক্তিদের জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।—যোহন ১১:৩৩-৩৫.

শোকের সময় প্রায়ই মানুষ রেগে যায়, বিশেষ করে হঠাৎ যদি কেউ মারা যায়। একজন শোকার্ত ব্যক্তির রেগে যাওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। একটা কারণ হতে পারে, কোনো সম্মাননীয় ব্যক্তির অবিবেচকের মতো করা কোনো ভিত্তিহীন মন্তব্য। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত মাইক তার নিজের কথা মনে করে বলেন, “মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমি আমার বাবাকে হারাই। বাবাকে কবর দেওয়ার সময় গির্জার একজন পাদরি বলেছিলেন, ‘স্বর্গে ভালো লোকেদের প্রয়োজন রয়েছে আর তাই ঈশ্বর তাড়াতাড়ি তাদেরকে নিজের কাছে ডেকে নেন।’ * তার কথা শুনে আমি খুব রেগে যাই কারণ বাবাকে হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। ৬৩ বছর পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনও আমি পাদরির সেই কথাগুলো ভুলতে পারিনি।”

অপরাধবোধ সম্বন্ধে কী বলা যায়? হঠাৎ করে কেউ মারা গেলে একজন শোকার্ত ব্যক্তি হয়তো বার বার এই কথাগুলো মনে করে থাকে, ‘আমি যদি এটা করতাম বা ওটা করতাম, তা হলে সে হয়তো আজ বেঁচে থাকত।’ আবার হতে পারে, মৃত্যুর আগে শেষ বারের মতো কথা বলার সময় আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। সেই কথাগুলো ভেবে আপনি হয়তো নিজেকে আরও বেশি অপরাধী বলে মনে করেন।

আপনি যদি সবসময় নিজেকে অপরাধী বলে মনে করেন আর রেগে যান, তা হলে সেই অনুভূতি চেপে রাখবেন না। এর পরিবর্তে, এমন কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, যিনি আপনার কথা শুনবেন এবং আপনাকে এই বিষয়ে আশ্বাস দেবেন, শোকার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের অনুভূতি আসাটা স্বাভাবিক। বাইবেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “বন্ধু সব সময়েই ভালবাসে, আর ভাই থাকে দুর্দশার সময়ে সাহায্য করবার জন্য।”—হিতোপদেশ ১৭:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যিহোবা ঈশ্বর শোকার্ত ব্যক্তির সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারেন। হৃদয় উজাড় করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন কারণ ‘তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৭) এর চেয়েও বড়ো কথা হল, ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন, যারা এভাবে প্রার্থনা করে, তারা “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা লাভ করবে। আর এভাবে তারা নিজেদের উদ্‌বেগ ও অনুভূতিকে কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারবে। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) এ ছাড়া, ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য তাঁর সান্ত্বনাদায়ক বাক্য বাইবেল পড়ুন। সেখান থেকে পাওয়া সাহায্যকারী শাস্ত্রপদগুলো একটা জায়গায় লিখে রাখুন। (নীচে দেওয়া  বাক্সটা দেখুন।) আপনি হয়তো সেগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটা পদ মুখস্থ করতে পারেন। রাতের বেলা যখন আপনি একা থাকেন আর আপনার চোখে ঘুম আসে না, তখন এই পদগুলো নিয়ে চিন্তা করলে আপনি উপকার পেতে পারেন।—যিশাইয় ৫৭:১৫.

সম্প্রতি, ৪০ বছর বয়সি জয়ন্ত তার স্ত্রীকে মৃত্যুতে হারান। তার স্ত্রী ক্যান্সারে ভুগছিলেন। জয়ন্ত বলেন, একেক সময় তার নিজেকে খুব একা লাগে। কিন্তু, সেইসময় প্রার্থনা তাকে খুবই সাহায্য করে। তিনি স্বীকার করেন, “আমি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমার আর নিজেকে একা বলে মনে হয় না। প্রায়ই রাতের বেলা আমার ঘুম ভেঙে যায় আর তারপর ঘুমই আসতে চায় না। শাস্ত্র থেকে সান্ত্বনাদায়ক পদগুলো পড়ার, তা নিয়ে ধ্যান করার এবং প্রার্থনায় হৃদয় উজাড় করে ঈশ্বরের কাছে নিজের অনুভূতির কথা বলার পর আমার ভালো লাগে; আমি শান্তি ফিরে পাই। এতে আমার মন হালকা হয় আর আমি ঘুমাতে পারি।”

বিজয়া নামে একজন যুবতী মহিলাও প্রার্থনা করে উপকার পেয়েছেন। তার মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। বিজয়া বলেন, “আমার কষ্টকর মুহূর্তে আমি শুধু ঈশ্বরের নাম ধরে ডাকি এবং কান্নায় ভেঙে পড়ি। যিহোবা আমার প্রার্থনা শোনেন আর সবসময় আমাকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেন।”

যারা শোকার্ত ব্যক্তিদের পরামর্শ দেয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, ‘শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে, এমন ব্যক্তিদের উচিত অন্যদের সাহায্য করা কিংবা কোনো সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নেওয়া। এভাবে তারা আনন্দ ফিরে পেতে পারে এবং সহজেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারে।’ (প্রেরিত ২০:৩৫) অনেক শোকার্ত খ্রিস্টান অন্যদের সাহায্য করার ফলে সত্যিই সান্ত্বনা পেয়েছে।—২ করিন্থীয় ১:৩, ৪. (w16-E No. 3)

^ অনু. 5 এটা বাইবেলের শিক্ষা নয়। বাইবেল জানায়, কেন মানুষ মারা যায়।—উপদেশক ৯:১১; যোহন ৮:৪৪; রোমীয় ৫:১২.