সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

 পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালনপালন

যেভাবে ‘না’ বলা যায়

যেভাবে ‘না’ বলা যায়

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আপনার সন্তানকে ‘না’ বলা-ই যায় না। ‘না’ কথাটা শুনলেই সে এমন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় যে, আপনার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। কোনোভাবেই আপনি তাকে শান্ত করতে পারেন না আর তাই শেষপর্যন্ত তার আবদার মেনে নেওয়া ছাড়া আপনার কিছুই করার থাকে না। আপনার সন্তানের জেদের জন্য এবারও অতিষ্ট হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হয়।

বার বার ঘটা এই বিরক্তিকর ঘটনা বন্ধ করা আপনার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু প্রথমে আসুন, আমরা ‘না’ বলার বিষয়ে কয়েকটা বাস্তব সত্য বিবেচনা করে দেখি।

আপনার যা জানা উচিত

‘না’ বলা মানেই নিষ্ঠুরতা নয়। কিছু কিছু বাবা-মা এই বিষয়ে একমত না-ও হতে পারেন। তারা হয়তো বলতে পারেন, আপনার সন্তানের সঙ্গে আপনি এই বিষয় নিয়ে যুক্তি করতে পারেন, তাকে বোঝাতে পারেন আর এমনকী তার সঙ্গে আলোচনাও করতে পারেন। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, সন্তানকে ‘না’ বলবেন না, কারণ তাতে তার মন ভেঙে যেতে পারে।

এটা ঠিক যে, ‘না’ বললে প্রথম প্রথম আপনার সন্তান নিরাশ হতে পারে। তবে এটা তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেতে সাহায্য করবে, যা হল জগতে সব কিছুই পাওয়া সম্ভব নয় আর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সেটা মেনে নিতে হবে। কিন্তু আপনি যদি তার জেদের সামনে নতিস্বীকার করেন, তাহলে তার ওপর আপনার যে-অধিকার রয়েছে, সেটা কমে যাবে এবং তা করে আপনি আপনার সন্তানকে এটা শেখাচ্ছেন যে, ঘ্যানঘ্যান করে কিছু চাইলেই সে আপনার কাছ থেকে সেটা আদায় করে নিতে পারবে। এভাবে তার জেদ পূরণ করতে থাকলে একসময় সে নিজেই আপনার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে উঠবে। আসলে, কতদিন ধরে একটা বাচ্চা সেই বাবা-মাকে সম্মান করতে পারে, যাদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো কোনো কিছু আদায় করে নেওয়া যায়?

আপনার বলা ‘না’ আপনার সন্তানকে কৈশোর ও প্রাপ্তবয়সের জন্য প্রস্তুত করে। এটা তাকে আত্মত্যাগের উপকারিতা সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করে। যখন এক সন্তান এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা শেখে, তখন এটা তাকে কিশোর বয়সে মাদকদ্রব্য সেবন করার অথবা বিবাহপূর্ব যৌনসম্পর্ক করার চাপের মুখে নতিস্বীকার না করতে সাহায্য করে।

আপনি যখন আপনার সন্তানকে ‘না’ বলেন, তখন সেটা তাকে প্রাপ্তবয়সের জন্যও প্রস্তুত করে। ড. ডেভিড ওয়ল্স এই বিষয়ে লেখেন, ‘সত্য বিষয়টা হল আমরা অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্করা যা চাই, তা পাই না। তাই, আমরা যখন আমাদের সন্তানদের এটা শেখাই যে, তারা জীবনে যা চাইবে তা-ই পাবে, তখন আসলে আমরা আমাদের সন্তানদের ক্ষতি করি।’ *

 আপনি যা করতে পারেন

আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করুন। আপনি চান, আপনার সন্তান যেন একজন দক্ষ, আবেগগতভাবে দৃঢ় এবং সফল ব্যক্তি হয়ে ওঠে। কিন্তু আপনি যদি তার সমস্ত বায়না পূরণ করেন, তাহলে সেই লক্ষ্য অনুযায়ী আপনি তাকে গড়ে তুলতে পারবেন না। বাইবেল এই বিষয়ে বলে যে, যদি কাউকে “ছেলেবেলা থেকে . . . আশ্‌কারা দেওয়া হয়, শেষে তাকে দমন করা যায় না।” (হিতোপদেশ ২৯:২১, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) তাই, ‘না’ বলা হল কার্যকারী উপায়ে আপনার সন্তানকে শাসন করার একটা দিক। এই ধরনের শাসন আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতি নয় বরং উপকার নিয়ে আসবে।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১৯:১৮.

আপনি যখন ‘না’ বলেন, তখন তাতে স্থির থাকুন। আপনার সন্তান আপনার চেয়ে বয়সে বড়ো নয়। আর তাই, ‘না’ বলা নিয়ে তার সঙ্গে তর্কাতর্কি করার দরকার নেই, তাহলে মনে হবে আপনি হয়তো সেটার জন্য আপনার সন্তানের অনুমোদন চাইছেন। তবে এটা ঠিক যে, সন্তানরা যখন বড়ো হতে থাকে, তখন তাদের “নিজেদের শিক্ষা দিয়ে . . . ভাল মন্দের বিচার করতে” শেখার প্রয়োজন। (ইব্রীয় ৫:১৪, ইজি-টু-রিড ভারশন) সেইজন্য আপনার সন্তানের সঙ্গে যুক্তি করা ভুল নয়। কিন্তু আপনি কেন ‘না’ বলেছেন, সেটা নিয়ে ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করবেন না। আপনি যত তার সঙ্গে এই নিয়ে তর্কবিতর্ক করবেন, তত আপনার সন্তান আপনার উত্তরকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত হিসাবে না দেখে বরং অনুরোধ হিসাবে দেখবে।—বাইবেলের নীতি: ইফিষীয় ৬:১.

সিদ্ধান্তে অটল থাকুন। আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটল আছেন কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আপনার সন্তান আপনার কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে বা কাকুতিমিনতি করতে পারে। আপনার ঘরে থাকার সময় যদি এ-রকমটা ঘটে, তখন আপনি কী করতে পারেন? বিগড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভালোবাসুন (ইংরেজি) নামক একটা বই সুপারিশ করে, ‘সন্তানের কাছ থেকে অন্য কোথাও চলে যান। তাকে বলুন, “তুমি যদি ঘ্যানঘ্যান করতে চাও, করো। আমি তোমার কথা শুনতে চাই না। এখন তুমি নিজের রুমে যাও আর যতক্ষণ না তোমার ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ হয়, ততক্ষণ সেখানেই থাক।”’ প্রথম প্রথম আপনার পক্ষে এইরকম দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া ও সেইসঙ্গে আপনার সন্তানের পক্ষে তা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারবে, আপনি যা বলেন সেটাই করেন, তখন তার জেদ ধীরে ধীরে কমে যাবে।—বাইবেলের নীতি: যাকোব ৫:১২.

শুধু বাবা অথবা মা হিসাবে আপনার অধিকার ফলানোর জন্য ‘না’ বলবেন না

যুক্তিবাদী হোন। শুধু বাবা অথবা মা হিসাবে আপনার অধিকার ফলানোর জন্য ‘না’ বলবেন না। এর পরিবর্তে, আপনাদের “শান্ত ভাব [“যুক্তিবাদিতা,” NW] মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।” (ফিলিপীয় ৪:৫) আপনি কখনো কখনো আপনার সন্তানকে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারেন কিন্তু সেটা তার ঘ্যানঘ্যানানির কাছে নতিস্বীকার করে নয় বরং তার ন্যায্য আবদারের জন্য।—বাইবেলের নীতি: কলসীয় ৩:২১▪ (g১৪-E ০৮)

^ অনু. 10 যে-বই থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা হল, না: সব বয়সের বাচ্চাদের কেন এটা শোনা প্রয়োজন এবং যেভাবে বাবা-মায়েরা না বলতে পারে (ইংরেজি)।