সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের নামের উচ্চারণ যদি অনিশ্চিতই হয়, তাহলে কেন সেটি ব্যবহার করব?

ঈশ্বরের নামের উচ্চারণ যদি অনিশ্চিতই হয়, তাহলে কেন সেটি ব্যবহার করব?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

ঈশ্বরের নামের উচ্চারণ যদি অনিশ্চিতই হয়, তাহলে কেন সেটি ব্যবহার করব?

 প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নাম কীভাবে উচ্চারণ করা হতো, আজকে কেউ তা সঠিকভাবে জানে না। কিন্তু এটা লক্ষণীয় যে, বাইবেলের পাঠ্যাংশে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম প্রায় ৭,০০০ বার পাওয়া যায়। পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু ঈশ্বরের নাম প্রকাশ করেছিলেন আর সেই নামকে পবিত্র করার জন্য প্রার্থনা করতে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯; যোহন ১৭:৬) তাই, একটা বিষয় নিশ্চিত যে, ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা হল খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাহলে সেই নামের সঠিক উচ্চারণ আজ কেন অনিশ্চিত? এর দুটো প্রধান কারণ রয়েছে।

প্রথমত, প্রায় দুহাজার বছর আগে, যিহুদিদের মধ্যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এক পরম্পরাগত রীতি শুরু হয়েছিল যে, ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করা অন্যায়। একজন পাঠক যখন বাইবেলের পাঠ্যাংশে সেই নামটি পেতেন, তখন তিনি নামটি উচ্চারণ না করে সেটিকে “প্রভু” হিসেবে পড়তেন। এভাবে, বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার না করার ফলে লোকেরা ঈশ্বরের নামের উচ্চারণ ভুলে গিয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, প্রাচীন ইব্রীয় ভাষা স্বরবর্ণ ছাড়াই লেখা হতো, যা অনেকটা বাংলা এবং অন্যান্য ভাষায় শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপগুলোর অনুরূপ। লিখিত পাঠ্যাংশ পড়ার সময়, পাঠক তার স্মরণশক্তি থেকে সেই উহ্য স্বরধ্বনি যোগ করে পড়তেন। পরবর্তী সময়ে, ইব্রীয় শব্দগুলোর উচ্চারণ পুরোপুরি ভুলে যাওয়াকে রোধ করার জন্য একটা পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হয়েছিল। ইব্রীয় বাইবেলে প্রতিটি শব্দের সঙ্গে স্বরবর্ণের চিহ্নগুলো যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু, ঐশিক নামের ক্ষেত্রে, পাঠককে বিকল্প শব্দটির উচ্চারণ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য, হয় “প্রভু” শব্দটির সঙ্গে স্বরবর্ণের চিহ্নগুলো যোগ করা হতো কিংবা কিছুই যোগ করা হতো না।

ফলে, পাঠ্যাংশে যা রয়ে গিয়েছিল, তা হল চারটে ব্যঞ্জন বর্ণ যেটিকে টেট্রাগ্র্যামাটোন বলা হয় এবং একটি অভিধান এটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে, “চারটে ইব্রীয় অক্ষর, যেগুলো সাধা[রণত] YHWH অথবা JHVH দ্বারা প্রতিবর্ণীকৃত হয়েছে আর তা বাইবেলে দেওয়া ঈশ্বরের নামের সঠিক রূপ গঠন করে।” তাই এটা বোঝা সহজ যে, JHVH অক্ষরের সঙ্গে কীভাবে স্বরবর্ণের চিহ্নগুলো এবং স্বরধ্বনি যোগ করার ফলে “যিহোবা” শব্দটি হয়েছে, যেটি বাংলা ভাষায় অতি পরিচিত ও ব্যাপকভাবে গৃহীত একটা রূপ।

কিন্তু, কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি “ইয়াওয়ে” হিসেবে উচ্চারণ করার সুপারিশ করে থাকে। সেটি কি অনেকটা মূল ভাষার উচ্চারণের মতোই? কেউই তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তি এই উচ্চারণটি ব্যবহার না করার কারণগুলো উল্লেখ করেছে। অবশ্য, বাইবেলের নামগুলোকে যখন আধুনিক দিনের ভাষায় উচ্চারণ করা হয়, তখন সম্ভবত সেগুলোর উচ্চারণ মূল ইব্রীয় ভাষার মতো শোনায় না আর সেগুলো নিয়ে খুব কম লোকই আপত্তি জানিয়ে থাকে। এর কারণ হল, এই নামগুলো আমাদের ভাষার অংশ হয়ে গিয়েছে আর সহজেই সেগুলোকে শনাক্ত করা যায়। তাই, যিহোবার নামের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যায়।

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদেরকে ঈশ্বরের নামের প্রজা বলা হয়েছিল। তারা অন্যদের কাছে “যিহোবার” নাম প্রচার করেছিল ও তাদেরকে সেই নামে ডাকার জন্য উৎসাহ দিয়েছিল। (প্রেরিত ২:২১; ১৫:১৪; রোমীয় ১০:১৩-১৫, NW) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যে-ভাষাতেই কথা বলি না কেন, আমরা যেন তাঁর নাম ব্যবহার করি, এটির তাৎপর্য উপলব্ধি করি এবং এটি যে-অর্থ বহন করে, তার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি। (w০৮ ৮/১)